রাজনীতি—এই শব্দটি আজ অধিকাংশ মানুষের কাছে ষড়যন্ত্র, ক্ষমতার লড়াই এবং স্বার্থপরতার প্রতিচ্ছবি। কিন্তু ইসলাম যখন রাজনীতির কথা বলে, তখন এটি হয় নেতৃত্ব, ন্যায়বিচার ও মানুষের কল্যাণের প্রতীক। এই ব্লগে আমরা তুলনামূলকভাবে আলোচনা করব ইসলামিক রাজনীতি এবং আধুনিক সেক্যুলার রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য, দর্শন ও উদ্দেশ্য।
ইসলামে রাজনীতি: একটি ঈমানদার কাঠামো
ইসলামে রাজনীতি কোনো নিরপেক্ষ বিষয় নয়, বরং এটি দ্বীনেরই একটি অংশ। ইসলাম কেবল ব্যক্তিগত ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং শাসন কাঠামো উপস্থাপন করে।
রাসূল ﷺ এর রাজনৈতিক ভূমিকা:
-
মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
-
সংবিধান তৈরি (মদিনার সনদ)
-
কূটনৈতিক সম্পর্ক
-
যুদ্ধ ও শান্তি চুক্তি
-
বিচারকার্য পরিচালনা
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, আল্লাহ তাদেরকে জমিনে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন…”
— (সূরা নূর: ৫৫)
আধুনিক রাজনীতি: ক্ষমতার খেলা ও মতাদর্শের সংঘাত
আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বিশেষ করে গণতন্ত্র বা সেক্যুলারিজম, মানুষের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এতে:
-
আইন তৈরি হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে
-
সত্য ও ন্যায়ের মানদণ্ড পরিবর্তনশীল
-
নৈতিকতা নয়, লাভ-লোকসান ও জনপ্রিয়তাই মুখ্য
👉 আধুনিক রাজনীতি যেখানে মানুষের তৈরি নীতি অনুসরণ করে, ইসলাম সেখানে আল্লাহ প্রদত্ত হুকুমকে ভিত্তি করে।
প্রধান পার্থক্য: ইসলামিক বনাম আধুনিক রাজনীতি
বিষয় | ইসলামিক রাজনীতি | আধুনিক রাজনীতি |
---|---|---|
ভিত্তি | কুরআন ও সুন্নাহ | মানব রচিত সংবিধান |
উদ্দেশ্য | আল্লাহর সন্তুষ্টি, ইনসাফ | ক্ষমতা লাভ, দলীয় স্বার্থ |
আইন প্রণয়ন | শরিয়াহ ভিত্তিক | পার্লামেন্ট ভিত্তিক |
নেতৃত্ব | আমানত ও তাকওয়ার ভিত্তিতে | জনপ্রিয়তা ও প্রচারণার ভিত্তিতে |
বিচার | নিরপেক্ষতা ও আল্লাহর ভয় | দলীয় চাপ ও রাজনৈতিক প্রভাব |
ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা: খিলাফতের মডেল
খিলাফত একটি এমন রাজনৈতিক কাঠামো যেখানে খলিফা বা নেতা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী শাসন করেন। এটি ব্যক্তির অধিকার, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, ও উম্মাহর ঐক্য রক্ষা করে।
সাহাবীদের যুগে এই ব্যবস্থার বাস্তব প্রয়োগ দেখা যায়, যেখানে:
-
উমর (রাঃ) জনগণের সামনে হিসাব দিতে বাধ্য ছিলেন
-
আবু বকর (রাঃ) খিলাফতের শুরুতেই বলেছিলেন, “তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী, যতক্ষণ না আমি তার অধিকার আদায় করে দেই।”
রাজনৈতিক নেতার বৈশিষ্ট্য ইসলামে
“যাকে আমরা নেতা নিই, সে যেন আমানতদার হয়, হালাল-হারামের জ্ঞান রাখে, দয়ালু হয়, এবং আল্লাহর ভয় রাখে।”
ইসলামে রাজনীতি হলো সেবা ও জবাবদিহি—না যে ‘ক্ষমতা উপভোগের লাইসেন্স’।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি: এক নিঃশ্বাসে ধ্বংস
আজকের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ইসলামিক নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। বেশিরভাগ শাসকগণ:
-
পশ্চিমা মতাদর্শে প্রভাবিত
-
জনগণের পরিবর্তে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী
-
ইসলামি আইন উপেক্ষাকারী
এর ফলে:
-
ন্যায়বিচারের অভাব
-
ফিতনা-ফ্যাসাদের বিস্তার
-
উম্মাহর বিভক্তি
ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন পুনরায় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন
ইসলামিক রাজনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে আমাদের করতে হবে:
-
রাজনৈতিক শিক্ষা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে অর্জন
-
সৎ, আমানতদার নেতৃত্ব তৈরিতে কাজ
-
জাতিকে ঈমান ও তাকওয়ার ওপর ঐক্যবদ্ধ করা
-
আধুনিক প্রযুক্তি ও কূটনীতি ব্যবহার করে ইসলামি রাষ্ট্রদর্শন প্রচার
ইসলামের রাজনীতি কেবল একটি পদ্ধতি নয়, এটি একটি আদর্শ। যেখানে নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব, যেখানে আইন মানে আল্লাহর হুকুম এবং যেখানে রাজনীতি মানে মানুষের কল্যাণ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। আমাদের প্রয়োজন সেই নৈতিকতা-ভিত্তিক, আল্লাহভীতির রাজনীতি যা উম্মাহকে সম্মান ও নিরাপত্তা দিতে পারে।