ইসলামে রাজনীতি: দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ
ভূমিকা
অনেকেই মনে করেন, ইসলাম শুধুমাত্র ইবাদত বা আধ্যাত্মিকতার ধর্ম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যার প্রতিটি দিক মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক জীবনের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়। ইসলামী রাজনীতি কেবল একটি ক্ষমতার খেলা নয়, বরং এটি ন্যায়, সত্য, এবং কল্যাণের পথে সমাজকে পরিচালিত করার একটি পবিত্র দায়িত্ব।
ইসলাম কেন রাজনীতিকে গুরুত্ব দেয়?
ইসলামে রাজনীতি কেবল একটি প্রশাসনিক কাঠামো নয়, বরং এটি আমানত ও খিলাফাত—আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের উপর অর্পিত দায়িত্ব। কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা আমানত তার প্রাপকের নিকট অর্পণ করো এবং যখন মানুষের মধ্যে বিচার করো, তখন ইনসাফপূর্ণ বিচার করো।”
— (সূরা আন-নিসা: ৫৮)
এই আয়াতে “আমানত” বলতে নেতৃত্ব ও শাসনব্যবস্থাকেও বোঝানো হয়েছে।
রাসূল ﷺ এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব
রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন কেবল একজন নবী নন, বরং একজন রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাপতি, বিচারক, ও সামাজিক সংস্কারক। মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর তিনি ইসলামী শাসনের মৌলিক ভিত্তিগুলো স্থাপন করেন:
-
শূরা ভিত্তিক নেতৃত্ব (পারস্পরিক পরামর্শ)
-
ন্যায়বিচার ও সমতা
-
অভাবীদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণ
-
মুসলিম ও অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার রক্ষা
খিলাফাহ ও ইসলামী শাসনব্যবস্থা
রাসূল ﷺ এর ইন্তিকালের পর সাহাবায়ে কেরামরা যেভাবে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করেন, তা প্রমাণ করে ইসলামে রাজনৈতিক কাঠামোর গুরুত্ব কত গভীর। আবু বকর (রাঃ), ওমর (রাঃ), ওসমান (রাঃ), আলী (রাঃ) – তাঁদের প্রতিটি শাসনকাল ছিল ন্যায় ও ইনসাফের প্রতিচ্ছবি।
ইসলামি রাজনীতির মূলনীতি
১. তাওহিদ ও আখেরাতে বিশ্বাস: নেতৃত্ব দানের আগে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির ভয় থাকা আবশ্যক। ২. শূরার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ: কুরআনে বলা হয়েছে,
“তাদের কাজকর্ম পরস্পরের পরামর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।” — (সূরা আশ-শূরা: ৩৮) ৩. ইনসাফ ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা ৪. সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষা ৫. সেবা ও দায়বদ্ধতা
আধুনিক বিশ্বে ইসলামী রাজনীতি
বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে রাজনীতিকে ধর্ম থেকে আলাদা করে দেখা হয়, যা প্রকৃত ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সাংঘর্ষিক। ইসলাম এমন কোনো বিভাজন সমর্থন করে না যেখানে মসজিদ শুধু নামাযের জায়গা, আর রাষ্ট্র চলে পাশ্চাত্য ধাঁচে।
ইসলামী রাজনীতি সমাজকে অন্যায়, দুর্নীতি, ও শোষণ থেকে মুক্ত করার একটি হাতিয়ার। খিলাফাহের মতো ইসলামী শাসনব্যবস্থাই পারে সত্যিকার কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে।
ইসলামী রাজনীতি বনাম পাশ্চাত্য রাজনীতি
বৈশিষ্ট্য | ইসলামী রাজনীতি | পাশ্চাত্য রাজনীতি |
---|---|---|
ভিত্তি | কুরআন ও হাদীস | মানবনির্ভর আইন |
লক্ষ্য | আখেরাতে মুক্তি ও দুনিয়ার কল্যাণ | ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক প্রভাব |
শাসক | জবাবদিহিমূলক প্রতিনিধি | নির্বাচিত হলেও প্রায়শই দায়হীন |
আইনের উৎস | আল্লাহর বিধান | পার্লামেন্ট বা গণমত |
ইসলামে রাজনীতির ভূমিকা আজও প্রাসঙ্গিক
আজকের জগতে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, ও অনৈতিকতার মাঝে ইসলামী রাজনীতি আলোর দিশা হতে পারে। আমাদের উচিত সত্য ও ন্যায়ের পক্ষ নিয়ে ইসলামি নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা। এটা শুধু রাজনৈতিক কাজ নয়, বরং ইবাদতের অংশ।
উপসংহার
ইসলামী রাজনীতি হল একটি পবিত্র দায়িত্ব—আল্লাহর জমিনে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, মজলুমের পাশে দাঁড়ানো, এবং সমাজে শান্তি ও সুবিচার নিশ্চিত করা। রাজনীতি থেকে ইসলামকে দূরে সরিয়ে রাখা মানে হলো ইসলামের পূর্ণতা থেকে দূরে থাকা।