ভূমিকা
ফিলিস্তিন বা পবিত্র ভূমি (الارض المقدسة) মুসলিমদের হৃদয়ের গভীরে গেঁথে থাকা এক আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক স্থান। এটি শুধু একটি ভৌগলিক অঞ্চল নয়, বরং এটি কুরআন, হাদীস ও ইসলামী ইতিহাসে বহু বার উল্লেখিত একটি মহিমান্বিত স্থান। মসজিদে আকসা, আল-কুদস শহর, এবং বহু নবীর পদচিহ্নে পূর্ণ এই ভূমি মুসলিম উম্মাহর জন্য শুধু ঐতিহাসিক নয় বরং ঈমানি সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ।
আল-কুদস: প্রথম কিবলা ও তৃতীয় পবিত্র মসজিদ
“মহিমান্বিত সেই সত্তা যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিকালে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশেপাশে আমি বরকত দান করেছি।”
— (সূরা আল-ইসরা: ১)
এই আয়াতে মসজিদে আকসা এর গুরুত্ব স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে। এটিই ছিল ইসলামের প্রথম কিবলা, অর্থাৎ নামাজের সময় প্রথম দিকে মুসলিমরা এই দিকেই মুখ করে নামাজ পড়তেন।
ফিলিস্তিনে নবীদের পদচিহ্ন
ফিলিস্তিন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি বহু নবীর জমিন:
-
ইব্রাহিম (আ.) এখানে বসতি গড়েছিলেন
-
ইসহাক (আ.) ও ইয়াকুব (আ.) এখানে ছিলেন
-
দাউদ (আ.) ও সুলাইমান (আ.) এই ভূমিতে রাজত্ব করেছিলেন
-
ঈসা (আ.) এখানেই জন্মগ্রহণ করেন এবং বনি ইসরাঈলের কাছে দাওয়াত দেন
এই সমস্ত নবী-রাসূলদের স্মৃতি বিজড়িত এই ভূমি কুরআন দ্বারা পবিত্র বলে ঘোষিত।
রাসূল ﷺ এর মিরাজ ও মসজিদে আকসার গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইসরা ও মিরাজ—যেখানে তিনি মসজিদে হারাম (মক্কা) থেকে মসজিদে আকসা (জেরুজালেম) পর্যন্ত রাত্রিকালে গমন করেন। মসজিদে আকসাতে তিনি সকল নবীদের ইমাম হয়ে নামায আদায় করেন। এই ঘটনা আল-কুদসের আধ্যাত্মিক মর্যাদাকে আরও শক্তিশালী করে।
ফিলিস্তিন: কুরআনের পবিত্র ভূমি
“হে আমার জাতি! তোমরা প্রবেশ কর সেই পবিত্র ভূখণ্ডে, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন।”
— (সূরা আল-মায়িদাহ: ২১)
এখানে “পবিত্র ভূমি” বলতে ফিলিস্তিনকেই বোঝানো হয়েছে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি আশীর্বাদপূর্ণ জায়গা।
ফিলিস্তিন ও মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব
আজ ফিলিস্তিন শুধুই ইতিহাস নয়, এটি একটি জীবন্ত সংকট। আল-কুদস আজ দখলদারিত্ব, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার। এই পরিস্থিতিতে মুসলিমদের দায়িত্ব হলো:
-
ঈমানি সংযোগ বজায় রাখা: ফিলিস্তিনকে কেবল একটি রাজনৈতিক ইস্যু না ভেবে ইসলামের অংশ হিসেবে দেখা।
-
দোআ ও সমর্থন: oppressed মুসলিমদের জন্য দোআ করা ও নৈতিক সমর্থন জানানো।
-
সচেতনতা বৃদ্ধি: ফিলিস্তিনের সত্য ইতিহাস ও ইসলামী গুরুত্ব সম্পর্কে মুসলিম সমাজকে জানানো।
-
নৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা: মানবিক সহায়তা প্রেরণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে সচেতন প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
ফিলিস্তিন ও উম্মাহর ঐক্য
ফিলিস্তিন ইস্যু শুধু ফিলিস্তিনিদের সমস্যা নয়—এটি পুরো মুসলিম উম্মাহর এক ঈমানি পরীক্ষা। আল-কুদস হারালে আমাদের আত্মপরিচয় ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিলীন হয়ে যাবে। রাসূল ﷺ বলেছেন:
“সমস্ত মুসলমান এক দেহের মতো, এক অঙ্গে ব্যথা পেলে পুরো শরীরই কষ্ট পায়।” — (সহীহ মুসলিম)
ইসলামি শাসন ও ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যখন ফিলিস্তিন ইসলামী শাসনের অধীনে ছিল (যেমন উমর ইবন খাত্তাবের আমলে বা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সময়), তখন সব ধর্মের মানুষ নিরাপত্তা ও শান্তিতে বসবাস করেছিল। কিন্তু ইসলামী নেতৃত্ব দুর্বল হলে এই ভূমি বারবার আগ্রাসনের শিকার হয়।
উপসংহার
ফিলিস্তিন ও আল-কুদস আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ ভূমির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আমাদের কর্তব্য, এই পবিত্র ভূমির প্রতি ঈমানি দায়িত্ব পালন করা—সচেতনতা ছড়ানো, দোআ করা, এবং জুলুমের বিরুদ্ধে সত্যের কণ্ঠস্বর হওয়া।