Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

কুরআন জানার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব

আল-কুরআন—মানব জাতির জন্য আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এটি কেবল আরবদের জন্য নয়, বরং সকল যুগ, সকল জাতি, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য এক চিরন্তন পথনির্দেশনা। কুরআন নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায়। অথচ বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এই ভাষা জানেন না। তাই কুরআনের তরজমা বা অনুবাদ জানা এবং বোঝা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
এই গ্রন্থটি এক বরকতময় কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ চিন্তা-ভাবনা করে এবং যেন বোধসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে।”
(সূরা ছোয়াদ, আয়াত ২৯)

তরজমাতুল কুরআন বলতে কী বোঝায়?

‘তরজমা’ শব্দের অর্থ হলো অনুবাদ। ‘তরজমাতুল কুরআন’ বলতে বোঝায় কুরআনের আরবি আয়াতের বাংলা বা অন্য কোনো ভাষায় অর্থ অনুবাদ করা, যাতে সাধারণ মানুষ আল্লাহর বার্তা বুঝতে পারে।

এটা মনে রাখতে হবে, তরজমা কুরআনের মূল নয়। কিন্তু মূল কুরআন বুঝতে হলে নির্ভরযোগ্য তরজমা অপরিহার্য।

তরজমার গুরুত্ব: কেন কুরআনের অর্থ জানা জরুরি?

১. আল্লাহর কালামকে বুঝে গ্রহণ করা

কুরআন তিলাওয়াত করাও সওয়াবের কাজ। কিন্তু শুধু মুখস্থ বা কেরাত নয়, বরং কুরআনের বক্তব্য বুঝে হৃদয়ে ধারণ করাই আসল উদ্দেশ্য।

কুরআন কেবল “তিলাওয়াতযোগ্য” নয়, এটি “চিন্তাযোগ্য”।

কুরআনের তরজমা ছাড়া—

  • আমরা জানতেই পারি না, আল্লাহ কী বলতে চাচ্ছেন
  • ইবাদতের মৌলিক দিকগুলোও বুঝে পালন করা সম্ভব হয় না

২. সঠিক আকীদা আমল নিশ্চিত করা

অসংখ্য মুসলমান ভুল বিশ্বাস বা কুসংস্কারে ভুগে, কারণ তারা কুরআনের বাণী জানে না। যদি কুরআনের তরজমা তারা জানত, তবে—

  • শিরক ও বিদআতের ভয়াবহতা
  • তাকওয়া ও তাওহিদের গুরুত্ব
  • দুনিয়া-আখিরাতের পরিণতি—এসব বিষয়ে সজাগ হতো

৩. ভাষাগত দূরত্ব দূর করা

কুরআন আরবি ভাষায় নাজিল হওয়ায় ভাষাগত দূরত্বের কারণে অনেক মুসলমান শুধু রেওয়াজ অনুযায়ী কুরআন পড়ে, অথচ তা কী বলছে জানে না। তরজমা শেখার মাধ্যমে—

  • সেই দূরত্ব দূর হয়
  • কুরআনের বার্তা হৃদয়ে স্থান পায়
  • আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর হয়

৪. ইবাদতে খুশু একাগ্রতা বৃদ্ধি

যারা নামাজে সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস বা অন্যান্য সূরা পড়ে কিন্তু তাদের অর্থ জানে না, তারা ইবাদতের মধ্যে একাগ্রতা অনুভব করতে পারে না। তরজমার মাধ্যমে তারা জানে—

  • আমি কী পড়ছি
  • কী বলছি আল্লাহর দরবারে
  • এবং সে অনুযায়ী মনোযোগ ও অনুভব তৈরি হয়

৫. দাওয়াত ইসলামী শিক্ষা প্রসারে সহায়ক

বর্তমান যুগে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরক্ষা হলো—আসল ইসলামকে তুলে ধরা। কুরআনের ভাষা ও বক্তব্য জানলে:

  • একজন মুসলিম নিজেই আত্মবিশ্বাসী হয়
  • অমুসলিমের প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয়
  • দাওয়াহর শক্তিশালী হাতিয়ার হয়

কীভাবে তরজমা পড়া উচিত?

তরজমা পড়া মানেই কেবল অনুবাদ দেখা নয়। বরং কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি—

বিশ্বস্ত স্বীকৃত অনুবাদ ব্যবহার করা: যেমন

  • মাওলানা মওদূদী (রহ.) – তাফহীমুল কুরআন
  • মুফতী তাকি উসমানী – সহজ ও বিশুদ্ধ তরজমা
  • মাওলানা আকরম খাঁ – সহজ ভাষায় বাংলা তরজমা
  • ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত তরজমা

তাফসিরসহ পড়া: অনেকে কেবল অনুবাদ পড়ে বিভ্রান্ত হয়। আয়াতের পূর্ণ ব্যাখ্যা বুঝতে নির্ভরযোগ্য তাফসির পড়া জরুরি। যেমন—ইবনে কাসির, তাফসিরে মাজহারি, তাফসিরে মারেফুল কুরআন ইত্যাদি।

ধীরে ধীরে মনোযোগ সহকারে পড়া: প্রতিদিন একটি করে সূরার তরজমা পড়লে, এক বছরে পুরো কুরআনের অর্থ জানা সম্ভব।

সিদ্ধান্ত না নিয়ে প্রশ্ন করলে আলেমের পরামর্শ নেওয়া: অনেক আয়াত জটিল বা প্রসঙ্গভিত্তিক। সেগুলোর ভুল ব্যাখ্যা থেকে বাঁচতে আলেমের ব্যাখ্যা নিতে হবে।

তরজমা জানার উপকারিতা

উপকারিতাব্যাখ্যা
ঈমান দৃঢ় হয়আল্লাহর বানী জানলে মনে ভয় ও ভালোবাসা জন্মায়
চিন্তাশক্তি বাড়েআয়াত নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে আত্মা জাগ্রত হয়
জীবনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়কুরআন জীবনের উদ্দেশ্য ও দিকনির্দেশনা দেয়
সওয়াবের দ্বার উন্মুক্ত হয়বোঝা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমলের সওয়াব বাড়ে

তরজমার মাধ্যমে জীবনে পরিবর্তন

কত মানুষ কুরআনের তরজমা পড়ে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে—

  • কেউ গান ছেড়ে দিয়েছে
  • কেউ হারাম ব্যবসা ত্যাগ করেছে
  • কেউ পরিবারে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছে
  • কেউ দাওয়াতের ময়দানে নেমেছে

তরজমা হলো সেই দরজা, যার মধ্য দিয়ে একজন সাধারণ মানুষ আল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছতে পারে।

কুরআনের তরজমা জানা কোনো অতিরিক্ত কাজ নয়, বরং এক অপরিহার্য দায়িত্ব। একজন মুসলমানের ঈমান, আমল, জীবনবোধ ও আত্মিক উন্নতির জন্য তরজমাতুল কুরআন অপরিহার্য।

রাসূল (সা.) বলেছেন:
তোমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি, যে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।”
(সহীহ বুখারী)

সুতরাং, চল আমরা আজই কুরআনের তরজমা পড়া শুরু করি, বুঝে পড়ি, এবং জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। কুরআন হবে আমাদের জীবনের গাইডবুক, এবং আখিরাতের নাজাতের সোপান।