Skip to content Skip to footer

ইসলামের দৃষ্টিতে পাপসমূহ: যে কাজগুলো পরকালের ধ্বংস ডেকে আনে

 

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান, যেখানে শুধু ইবাদত নয় বরং নৈতিকতা, আচরণ, ও জীবনের প্রতিটি দিকের জন্য রয়েছে দিকনির্দেশনা। পাপ (গুনাহ) সেইসব কাজ যেগুলো আল্লাহ ও রাসূল ﷺ নিষিদ্ধ করেছেন এবং যেগুলো পরকালে কঠিন শাস্তির কারণ হতে পারে। ইসলামে পাপকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়—ছোট পাপ (সগীরা) এবং বড় পাপ (কবীরা)। এই ব্লগে আমরা ইসলাম অনুযায়ী বড় পাপসমূহ, তাদের পরিণতি ও তা থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

পাপের সংজ্ঞা

“তুমি বলো, নিশ্চয়ই আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন সকল অশ্লীলতা, এবং পাপ…”
— (সূরা আল-আরাফ: ৩৩)

এই আয়াত থেকেই বোঝা যায়, পাপ কেবল বাহ্যিক নয়, অন্তরের কাজও হতে পারে। আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন, তা জেনে বা না জেনে করলে সেটি পাপের অন্তর্ভুক্ত হয়।

ইসলামে বড় পাপ (الكبائر)

রাসূল ﷺ বলেন:

“সাতটি ধ্বংসকারী কাজ থেকে বাঁচো।”
সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন: “ওগুলো কী?”
তিনি বললেন:

  • আল্লাহর সাথে শিরক

  • জাদু করা

  • অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা

  • সুদ খাওয়া

  • ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ

  • যুদ্ধ থেকে পালানো

  • নিরপরাধ নারীদের ওপর অপবাদ দেওয়া
    — (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বড় পাপ

১. শিরক (আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন)

“নিশ্চয়ই আল্লাহ শিরককে ক্ষমা করবেন না…”
— (সূরা নিসা: ৪৮)
শিরক হলো এমন পাপ যার জন্য ক্ষমা নেই যদি তাওবা না করা হয়। এটি সর্ববৃহৎ পাপ।

২. সুদ খাওয়া ও দেওয়া

“যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতের দিনে শয়তানের আছরগ্রস্তের মতো উঠবে…”
— (সূরা বাকারা: ২৭৫)
সুদভিত্তিক অর্থনীতি সমাজকে ধ্বংস করে এবং আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।

৩. যিনা (ব্যভিচার)

“তোমরা ব্যভিচারের ধারে-কাছেও যেয়ো না…”
— (সূরা ইসরা: ৩২)
যিনা সমাজ ধ্বংস করে দেয়, পরিবার ভাঙে, এবং অন্তরে কঠোরতা সৃষ্টি করে।

৪. অন্যায় হত্যা

“একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা গোটা মানবজাতিকে হত্যা করার সমান।”
— (সূরা মায়িদাহ: ৩২)

৫. অভিভাবকহীনদের সম্পদ আত্মসাৎ

এটি খুব ভয়ংকর পাপ এবং আখিরাতে আগুন খাওয়ার শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে (সূরা নিসা: ১০)।

৬. মিথ্যা সাক্ষ্য ও অপবাদ

“মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া শিরকের কাছাকাছি গোনাহ।”
— (সহীহ বুখারী)

গোপন পাপ: হৃদয়ের গুনাহ

সব পাপ চোখে দেখা যায় না। কিছু পাপ মনে গোপনে বাস করে, যেমন:

  • অহংকার (কিবর)

  • হিংসা (হাসাদ)

  • রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত)

রাসূল ﷺ বলেন:

“যার অন্তরে সরিষা দানার পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”

পাপের পরিণতি

দুনিয়াতে:

  • হৃদয়ে অশান্তি

  • দু‘আ কবুল হয় না

  • রিজিক কমে যায়

  • বারাকাহ উঠে যায়

আখিরাতে:

  • কঠিন শাস্তি

  • হাশরের দিনে লজ্জা

  • জাহান্নামের আগুন

  • আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া

পাপ থেকে মুক্তির উপায়

১. খাঁটি তওবা করা

“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো…” — (সূরা তাহরীম: ৮)

২. নামায ও ইবাদতের প্রতি যত্নশীল হওয়া
নামায পাপ থেকে রক্ষা করে — (সূরা আনকাবুত: ৪৫)

৩. পাপের সঙ্গ ত্যাগ করা
পাপী বন্ধু বা পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।

৪. সৎকাজে আত্মনিয়োগ করা
আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয়ই ভাল কাজগুলো মন্দ কাজগুলোকে মুছে দেয়।” — (সূরা হুদ: ১১৪)

পাপ আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনে ধ্বংস ডেকে আনে। কিন্তু ইসলামের সৌন্দর্য হলো—তওবার দরজা সবসময় খোলা। পাপ হোক যত বড়, যদি বান্দা সত্যিকারে অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসে, তবে আল্লাহ তা মাফ করে দেন। তাই আমাদের উচিত সচেতনভাবে পাপ থেকে দূরে থাকা, আল্লাহর ভয় রাখা এবং প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করা।